রমজান পেয়েও হতভাগা যারা
২৯ মার্চ ২০২৫, ১২:২৮ এএম | আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৫, ১২:২৮ এএম

মুসলমানদের জন্য আল্লাহ তাআলার এক বিশাল নিয়ামত হচ্ছে রমজান। রমজান হচ্ছে ইবাদতের বসন্তকাল। রহমত-বরকত, মাগফিরাত এবং নাজাতের মাস। রমজান গুনাহ পরিহার করার মাস। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত :
একদা মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা প্রদানের উদ্দেশ্যে মসজিদে নববিতে তাশরিফ নিয়ে গেলেন। মিম্বারের প্রথম সিঁড়িতে পা রেখে তিনি বললেন— ‘আমিন।’ দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখার পর পুনরায় তিনি বললেন ‘আমিন।’ তৃতীয় সিঁড়িতে পা রেখে তিনি আবারও বললেন ‘আমিন।’ এর পর তিনি খুতবা প্রদান করলেন। খুতবা শেষে মিম্বার থেকে নেমে আসার পর সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন ‘হে আল্লাহর রাসুল! আজ আপনি মিম্বারে আরোহণ কালে কোনো দোয়া করা ছাড়াই তিনবার ‘আমিন’ বলেছেন। এর কারণ কী?
রাসুলুল্লাহ (সা.) জবাবে বললেন— মূলত ব্যাপারটি হলো যখন আমি মিম্বারে আরোহণ করতে যাচ্ছিলাম, ঠিক সেই সময়-ই হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম আমার সামনে হাজির হয়ে তিনটি দোয়া করলেন। আর আমি এই দোয়ার পরিপ্রেক্ষিতেই ‘আমিন’ বলেছি।’ প্রকৃত অর্থে এগুলো দোয়া ছিল না; বরং এগুলো ছিল বদদোয়া। এখন আপনিই চিন্তা করুন, মসজিদে নববির মতো পবিত্র স্থান, আবার সম্ভবত জুমার দিন, তারপর খুতবা প্রদানের সময় যখন দোয়া কবুল হওয়ার সময়। দোয়াকারী হলেন আল্লাহতা আলার সর্বশ্রেষ্ঠ ফেরেশতা হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম। আর ‘আমিন’ বলেছেন স্বয়ং হজরত রাসুলে আকরাম (সা.)। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, কোনো দোয়া গৃহীত হওয়ার জন্য এর চেয়ে বেশি গ্যারান্টি আর কি হতে পারে? যাতে এতসব বিষয়ের সমন্বয় ঘটেছে, সে দোয়া নিশ্চয়ই বিফলে যাওয়ার নয়।
অতঃপর মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেছেন, হজরত জিবরাইল (আ.) প্রথম বদদোয়া এই করেছেন, ‘ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি যে বৃদ্ধ অবস্থায় মাতাপিতাকে পেল, অতঃপর সে তাদের খেদমত করে নিজের গুনাহ ক্ষমা করিয়ে জান্নাত অর্জন করতে পারল না।’ হজরত জিবরাঈলের এই বদদোয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আমি বলেছি ‘আমিন।’ এখানে উল্লেখ্য, কোন কোন সময় সন্তানের সামান্য কাজে সন্তুষ্ট হয়ে মাতাপিতা অন্তর থেকে খুশি হয়ে সন্তানের জন্য এমন দোয়া দিয়ে থাকেন, যা তার মুক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং যে ব্যক্তি মাতাপিতা বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর তাদের সেবাযতœ করে জান্নাতের ঠিকানা অর্জন করতে সক্ষম হলো না এবং নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারল না এ জাতীয় ব্যক্তির ধ্বংস হওয়াটাই যুক্তিযুক্ত।
হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম দ্বিতীয় বদদোয়া এই করেছেন: ‘ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তির যে পুরো রমজান মাস পাওয়া সত্ত্বেও নিজের গুনাহ ক্ষমা করাতে সক্ষম হলো না।’ হজরত জিবরাঈলের এই বদদোয়ার পরিপ্রেক্ষিতেও আমি বলেছি- ‘আমিন’। কেননা, রমজান মাস রহমতের মাস, নাজাত ও মাগফিরাতের মাস। এমন একটি সুবর্ণ সুযোগ হাতে আসার পরও সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে না পারা খুবই দুঃখজনক বিষয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম তৃতীয় বদদোয়া এই করেছেন: ‘ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি, যার সামনে আমার নাম আলোচিত হলো, অথচ সে আমার ওপর দরুদ শরিফ পাঠ করল না।’ হজরত জিবরাঈলের এই তিনটি বদদোয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আমি বলেছি- ‘আমিন’।
দুরূদ শরীফ পাঠ না করার ব্যাপারে কত বড় খোদায়ী ধমকি। অথচ আমরা বিষয়টিকে একেবারেই হালকা জ্ঞানে উড়িয়ে দিচ্ছি। এটি হালকা কোনো বিষয় নয়। তাই যখন-ই মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম উল্লেখ হবে, বিলম্ব না করে (সা.) এই দরুদ শরিফ পাঠ করে নেওয়া উচিত। আল্লাহ তাআলা রমজান মাসে সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্য পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনরা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অর্জন করতে পারো। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৩)। আর আল্লাহভীতির মূলকথা হলো গুনাহ ও পাপ থেকে বেঁচে থাকা। এ জন্যই রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও তদনুযায়ী আমল করা বর্জন করেনি, তার এই পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮০৪)। অপর হাদিসে এসেছে, ‘অনেক রোজাদার এমন আছে, যাদের রোজা পালনের সার হলো তৃষ্ণার্ত আর ক্ষুধার্ত থাকা।’ (সুনানে তিবরানি, হাদিস : ৫৬৩৬)। পবিত্র রমজানের বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে আল্লাহ বান্দার দুআ কবুল করেন এবং পাপ মার্জনা করেন।
যেমন ইফতারের পূর্বমুহূর্তে এই সময়গুলোতে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি প্রার্থনা করা এবং অতীত পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা আবশ্যক। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না : ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোজাদার এবং মজলুম ব্যক্তির দুআ।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৭৫২)। এ ছাড়া স্বয়ং রোজাও পাপ মার্জনার মাধ্যম। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা পালন করবে, আল্লাহ তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেবেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯০১)। যদি রমজানে পাপ পরিহার এবং অতীত পাপের জন্য আল্লাহর কাছে তাওবা করা হয়, তবে রোজা মুমিনের জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায় হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রোজা ঢালস্বরূপ, যতক্ষণ না তা ত্রুটিযুক্ত করা হয়।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২২৩৩)। এই হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসরা বলেন, ‘রোজাকে ঢালস্বরূপ বলার কারণ হলো তা মানুষকে পৃথিবীতে পাপাচার থেকে রক্ষা করে এবং পরকালে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করে।’
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

লোহাগাড়ায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ১০

বাংলাদেশ নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের ওই প্রতিবেদনে যা ছিলো

ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে মার্কিন প্রস্তাব মানছে না রাশিয়া

লিবিয়ায় অপহৃত ২৩ বাংলাদেশি উদ্ধার, দুই অপহরণকারী গ্রেপ্তার

পাক-বাংলা সম্পর্ক এবং রুনা লায়লাকে নিয়ে কি বললেন শাহবাজ শরিফ!

রাজশাহীতে ঈদ জামাতে ভেদাভেদ ভুলে সম্প্রীতির জন্য দোয়া

ইসরাইলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধে মার্কিং কংগ্রেসে বিল উত্থাপন

গাজায় যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর কমপক্ষে ৩২২ শিশু নিহত: ইউনিসেফ

যে কারণে ৭১’র জন্ম হয়, ঠিক একই কারণেই জন্ম হয় ২৪’র গণঅভ্যুত্থানের : ব্যারিস্টার ফুয়াদ

নাটোরে ঈদগাহে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়া নিয়ে ব্যাপক সংঘর্ষ

গাজায় পর্যাপ্ত খাদ্যের ইসরায়েলি দাবি ‘হাস্যকর’: জাতিসংঘের সমালোচনা

আট মাস পর হাসান মাহমুদকে দেখা গেল লন্ডনে

ঈদ অনুষ্ঠানে ধর্ম নিয়ে মমতা ব্যানার্জীর মন্তব্যকে ঘিরে সরগরম পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক অঙ্গন

দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস

ফেসবুক পোস্ট নিয়ে সুনামগঞ্জে ভয়াবহ সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ৫ জন

কবে মুক্তি পাবে ‘স্পাইডার ম্যান: ব্র্যান্ড নিউ ডে’?

ধানের শীষে ভোট দেয়ায় নারীকে ধর্ষণ, বিচার চেয়েও পায়নি

ফের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত ইমরান খান

ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন ঈদে গ্রামে যাওয়া মানুষ

মানিকগঞ্জে কলেজ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা